পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণ আজ। রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারোটায় পার্লামেন্টে হতে যাচ্ছে অনাস্থা ভোট। এতে হারলে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারাবেন ইমরান। তবে পার্লামেন্ট চলবে পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত। এই সময়ে এমপিদের ভোটে পাকিস্তান পাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, ভোটের আগের রাতে, দেশবাসীকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান।
গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে দক্ষহাতে ২২ গজ সামলে নিয়েছেন ইমরান খান। কিন্তু ২২ কোটি মানুষের দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে সাবেক এই ক্রিকেট তারকা সাফ জানিয়েছেন, মাঠে থাকবেন শেষ বল পর্যন্ত।
পাকিস্তানের ১৩তম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে তেহরিক-ই-ইনসাফ। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ছোট কয়েকটি দল নিয়ে সরকার গঠন করে ইমরানের দল। তখন থেকেই সরব বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট-পিডিএম নামে গঠিত হয় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট। ইমরানের অনাস্থা ভোটের মূল কারিগর এই পিডিএম।
অনাস্থা ভোটে ইমরান খান হারলে, ২০২৩ সালের আগস্টে তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ না হওয়া বহাল থাকবে পার্লামেন্ট। এরপর দুই মাসের মধ্যে হতে হবে সাধারণ নির্বাচন। সে পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পরিষদে ভোট হবে। সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী যে কোনও দল তাদের নেতার প্রতি সর্মথন আদায়ের চেষ্টা চালাবে।
অনাস্থা ভোটে ইমরানের ভাগ্য নির্ধারণের আগেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের নকশা করতে ব্যস্ত বিরোধী শিবির। এরই মধ্যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুসলিম লীগ-এন নেতা শাহবাজ শরীফের প্রতি সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। শাহবাজ তিন দফায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে গত বছরের এপ্রিলে জামিন পান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৯ সালে বেনজীর ভুট্টো এবং ২০০৬ সালে অনাস্থা ভোটে উৎড়ে গিয়েছিলেন শওকত আজিজ।
পাকিস্তানের ৭৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনও প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৫১ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এরপর একের পর এক প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয় সেনাবাহিনীর চাপে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে দেশটির কোনও প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৫১ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদঃ লিয়াকত আলী খান- (১৯৪৭-১৯৫১), জুলফিকার আলী ভুট্টো- (১৯৭৩-১৯৭৭), বেনজির ভুট্টো- (১৯৮৮-১৯৯০), (১৯৯৩-১৯৯৬), নওয়াজ শরীফ- (১৯৯০-১৯৯৩), (১৯৯৭-১৯৯৯), (২০১৩-২০১৭)।
১৯৫৮ সালে সেনাশাসন জারি করেন আইয়ুব খান, যা বহাল ছিল ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। এরপর ক্ষমতায় আসেন ইয়াহিয়া খান। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তানে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন দেন। যেখানে জয় পায় আওয়ামী লীগ। যদিও আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি তিনি।
১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর ইয়াহিয়াকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। প্রথমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে নতুন সংবিধান রচনার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৭৭ সালে তাঁকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান জিয়াউল হক।
১৯৮৮ সালে রহস্যজনক বিমান হামলায় জিয়াউল হক নিহত হলে পালাক্রমে ক্ষমতায় আসেন বেনজির ভুট্টো ও নেওয়াজ শরীফ। তারাও পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে ব্যর্থ হন।
১৯৯৯ সালে নেওয়াজকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ। তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেওয়াজ পালাক্রমে দেশ শাসন করে। তারাও মেয়াদ পূরণে ব্যর্থ হয়।